ঘরোয়া ভেষজ উদ্ভিদ দিয়ে হোম মেড রেমেডি তৈরির পদ্ধতি - ভাইরাল ভাবী

শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৯

ঘরোয়া ভেষজ উদ্ভিদ দিয়ে হোম মেড রেমেডি তৈরির পদ্ধতি

ঘরোয়া ভেষজ উদ্ভিদ দিয়ে হোম মেড রেমেডি তৈরির পদ্ধতি


ভেষজ উদ্ভিদ দিয়ে তৈরি ঘরোয়া রেমেডিগুলো প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আজকের দিনে আধুনিক চিকিৎসা বিদ্যা থাকলেও, এই ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো এখনো অনেকের কাছে জনপ্রিয়। মধু, আদা, তুলসি, হলুদসহ অন্যান্য ভেষজ উপাদানগুলো দিয়ে সহজে ঘরে তৈরি করা যায় এমন কিছু রেমেডির কথা এখানে আলোচনা করা হলো।



১. মধু ও আদা দিয়ে কাশির সিরাপ

উপকরণ:
- ২ টেবিল চামচ মধু
- ১ ইঞ্চি আদা (কুচি করে কাটা)
- ১/২ চা চামচ লেবুর রস (ঐচ্ছিক)

প্রস্তুত প্রণালী:
১. প্রথমে আদা ছোট ছোট কুচি করে কেটে নিন।
২. কুচি করা আদাটি একটি পাত্রে নিয়ে এতে লেবুর রস দিন।
৩. এরপর মধু যোগ করুন এবং ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
৪. এই মিশ্রণটি ফ্রিজে রেখে সংরক্ষণ করতে পারেন। প্রতিদিন ২-৩ বার ১ চা চামচ করে এই মিশ্রণ কাশি কমাতে সাহায্য করবে।

কেন এটা কার্যকর:
মধু একটি প্রাকৃতিক এন্টিসেপ্টিক এবং আদার মধ্যে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ রয়েছে যা গলা ব্যথা এবং কাশি কমাতে সাহায্য করে।

২. হলুদ-দুধ দিয়ে গলা ব্যথার চিকিৎসা

উপকরণ:
- ১ কাপ দুধ
- ১/২ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো
- ১ চা চামচ মধু (ঐচ্ছিক)

প্রস্তুত প্রণালী:
১. একটি পাত্রে দুধ নিয়ে তা হালকা গরম করুন।
২. গরম দুধে হলুদ গুঁড়ো যোগ করুন এবং ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
৩. মিশ্রণটি এক মিনিট ধরে ফুটিয়ে নিন।
৪. চাইলে এতে ১ চা চামচ মধু যোগ করতে পারেন।
৫. এই হলুদ-দুধ প্রতিদিন রাতে পান করলে গলা ব্যথা কমবে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে।

কেন এটা কার্যকর:
হলুদ প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান হিসেবে কাজ করে। দুধে প্রচুর পুষ্টি থাকে যা শরীরের জন্য উপকারী এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

৩. তুলসী পাতা দিয়ে ঠান্ডা এবং সর্দির চিকিৎসা

উপকরণ:
- ১০-১২টি তাজা তুলসী পাতা
- ১ চা চামচ মধু
- ২ কাপ পানি

প্রস্তুত প্রণালী:
১. প্রথমে পানি একটি পাত্রে নিয়ে ফুটতে দিন।
২. ফুটন্ত পানিতে তুলসী পাতা যোগ করে ৫-৭ মিনিট ধরে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন।
৩. ফুটানো হয়ে গেলে চা ছেঁকে নিয়ে তাতে মধু মেশান।
৪. এই তুলসী-চা দিনে ২-৩ বার পান করলে ঠান্ডা, সর্দি এবং কফ কমতে সাহায্য করবে।

কেন এটা কার্যকর:
তুলসী পাতা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ভাইরাল গুণাবলী সমৃদ্ধ। এটি শ্বাসনালীর প্রদাহ কমায় এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

৪. মেথি দিয়ে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধান

উপকরণ:
- ১ চা চামচ মেথি বীজ
- ১ গ্লাস পানি

প্রস্তুত প্রণালী:
১. রাতে ১ চা চামচ মেথি বীজ ১ গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।
২. সকালে খালি পেটে এই মেথি বীজসহ পানি পান করুন।
৩. প্রতিদিন সকালে এই পানি খেলে গ্যাস্ট্রিক এবং অ্যাসিডিটির সমস্যা কমবে।

কেন এটা কার্যকর:
মেথির মধ্যে রয়েছে ফাইবার যা হজমশক্তি বাড়ায় এবং অ্যাসিডিটি কমাতে সাহায্য করে।

৫. লেবু ও মধুর ডিটক্স পানীয়

উপকরণ:
- ১ কাপ উষ্ণ পানি
- ১ চা চামচ মধু
- ১/২ লেবুর রস

প্রস্তুত প্রণালী:
১. এক গ্লাস উষ্ণ পানিতে মধু এবং লেবুর রস যোগ করুন।
২. প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এই মিশ্রণটি পান করুন।

কেন এটা কার্যকর:
এই মিশ্রণটি শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে, হজমশক্তি বাড়ায় এবং ওজন কমাতে সহায়ক।

৬. নিমপাতা দিয়ে ত্বকের যত্ন

উপকরণ:
- ১০-১২টি নিমপাতা
- ১/২ কাপ পানি

প্রস্তুত প্রণালী:
১. নিমপাতা একটি পাত্রে নিয়ে তাতে পানি দিন।
২. পানিটি ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন এবং তারপর ঠান্ডা করে মুখে লাগানোর জন্য ব্যবহার করুন।
৩. এটি মুখ ধোয়ার সময় ব্যবহার করলে ত্বকের ব্রণ ও অন্যান্য ত্বকের সমস্যা কমবে।

কেন এটা কার্যকর:
নিমপাতায় অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণাগুণ রয়েছে যা ত্বকের সমস্যার সমাধানে সহায়ক।

৭. পুদিনা পাতার চা হজমশক্তি বৃদ্ধিতে

উপকরণ:
- ১০-১২টি পুদিনা পাতা
- ২ কাপ পানি

প্রস্তুত প্রণালী:
১. একটি পাত্রে পানি নিয়ে তাতে পুদিনা পাতা যোগ করুন।
২. পানি ফুটতে দিন এবং ৫-৭ মিনিট ধরে ফুটিয়ে নিন।
৩. ফুটানো হলে এই চা পান করুন, যা হজমশক্তি বাড়াতে সহায়ক হবে।

কেন এটা কার্যকর:
পুদিনা পাতায় অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিসেপটিক উপাদান রয়েছে যা হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

৮. লবঙ্গ দিয়ে দাঁতের ব্যথা নিরাময়

উপকরণ:
- ১-২টি লবঙ্গ
- ১/২ চা চামচ নারকেল তেল (ঐচ্ছিক)

প্রস্তুত প্রণালী:
১. লবঙ্গ চিবিয়ে দাঁতের ব্যথার স্থানে রাখুন।
২. চাইলে নারকেল তেল দিয়ে লবঙ্গ মিশিয়ে দাঁতে লাগাতে পারেন।
৩. দিনে ২-৩ বার এটি করলে দাঁতের ব্যথা কমে যাবে।

কেন এটা কার্যকর:
লবঙ্গ প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে, যা দাঁতের ব্যথা কমাতে সহায়তা করে।

৯. শসা দিয়ে চোখের ক্লান্তি দূর

উপকরণ:
- ২ টুকরো শসা

প্রস্তুত প্রণালী:
১. শসা পাতলা টুকরো করে কেটে তা ১০ মিনিটের জন্য ফ্রিজে রাখুন।
২. এরপর ঠান্ডা শসার টুকরোগুলো চোখের উপর ১৫-২০ মিনিট রেখে দিন।
৩. এটি প্রতিদিন ২ বার করলে চোখের ক্লান্তি দূর হবে এবং চোখের নিচের কালি কমবে।

কেন এটা কার্যকরঃ 
শসা ত্বকের উপর ঠান্ডা প্রভাব ফেলে এবং চোখের ক্লান্তি কমায়।

উপসংহারঃ 
উপরোক্ত ঘরোয়া রেমেডিগুলি সহজলভ্য উপাদান ব্যবহার করে ঘরে বসেই তৈরি করা যায়। এগুলোর কার্যকারিতা প্রাচীনকাল থেকেই স্বীকৃত, তবে কিছু ক্ষেত্রে যদি উপসর্গগুলি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ। ভেষজ উদ্ভিদ দিয়ে তৈরি এই হোম মেড রেমেডিগুলি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সহজ ও স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ